এডিশন ডেস্ক::
খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান ভেঙে পড়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষিকারা পাঠদানের প্রতি আগ্রহী নন। তারা শ্রেণিকক্ষে বই–খাতার পরিবর্তে সময় কাটান ফেসবুক আর টিকটকে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছে, আর অভিভাবকরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বিদ্যালয় সূত্র ও স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৯টায় পাঠদান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ দিনই ক্লাস শুরু হয় বেলা ১১টার পর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বাইনও আসেন দুপুর ১২টার দিকে। ফলে সকাল থেকে নিরাশ হয়ে বসে থাকতে হয় শিশু শিক্ষার্থীদের।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষিকা মাহমুদা সুলতানা ও ইন্দানী রাণী ক্লাসে পাঠদানের বদলে ফোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বোর্ডের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে, অথচ শিক্ষিকারা মগ্ন থাকেন মোবাইল স্ক্রিনে। অভিযোগ আছে, খুলনা শহরে বসবাসকারী মাহমুদা সুলতানা বৃহস্পতিবার সকালে হাজিরা খাতায় সই করেই বেরিয়ে যান। রবিবারও তিনি প্রায়ই দেরিতে বিদ্যালয়ে আসেন।
অভিভাবকদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে বিদ্যালয়ের আরেকটি চিত্র। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছাগল ও গরু পালন করছেন শিক্ষিকা হোসনেয়ারা ও মাসকুরা খাতুন। প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বাইন এই বিষয়ে আপত্তি জানালে তাকে অপমান করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক অনাদি রঞ্জন সরকার নিয়মিত পাঠদান করার বদলে বাজারে ব্যবসার খোঁজখবর নিতে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে একাধিকবার বাইরে চলে যান।
এসব অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মৃন্ময় মন্ডলের বিরুদ্ধেও। স্থানীয়দের দাবি, তিনি শিক্ষকদের অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ফলে বারবার অভিযোগ করেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পাননি অভিভাবকরা। সম্প্রতি এ নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ঝগড়ার ঘটনাও ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে হতাশ অভিভাবকেরা বলছেন, “আমাদের সন্তানরা পড়াশোনা শিখতে স্কুলে আসে। কিন্তু শিক্ষিকারা ক্লাসে বসে ফেসবুক চালান। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের শামিল।
আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বাইন বলেন, “বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে গরু–ছাগল পালনের বিষয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছি। আমি শিগগিরই এগুলো বের করে দেব। ক্লাসে ফেসবুক ব্যবহারের অভিযোগও খতিয়ে দেখছি। আমাকে পাঁচ দিন সময় দিন, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি নিয়মিত সময়েই আসি। তবে প্রশাসনিক কিছু কাজের কারণে কখনো কখনো দেরি হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো শিক্ষক অনিয়মে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে গবাদি পশু পালন ও শিক্ষিকাদের টিকটক, ফেসবুক আসক্তি বিষয়ে খোঁজ নিবেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে শিশুদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।