ভোলা সদর:
ভোলায় ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আমিনুল ইসলাম হক (নোমানী হুজুর) হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে আজ সোমবার বিক্ষোভ–সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তৌহিদি জনতার ব্যানারে এ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
ভোলার সদরের হাটখোলা জামে মসজিদ চত্বরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এ বিক্ষোভ–সমাবেশ হয়। এতে সাধারণ জনতার পাশাপাশি ক্লাস বর্জন করে অংশ নেন সদর উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। তাঁরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। সমাবেশ শেষে বক্তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে ভোলায় হরতাল, অবরোধ, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
গত শনিবার সাড়ে নয়টার দিকে বাসায় ফেরেন আমিনুল ইসলাম। বাসায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁকে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমিনুল ইসলাম জাতীয় ইমাম সমিতির ভোলা জেলা শাখার সহসভাপতি ও ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার সানি মুহাদ্দিস ছিলেন। ঘটনার সময় বাসায় পরিবারের সদস্যরা ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান তজুমদ্দিন উপজেলায় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় রোববার একটি হত্যা মামলা করেছেন আমিনুল ইসলামের স্ত্রী। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
আমিনুল ইসলামকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবিতে ডাকা বিক্ষোভ–সমাবেশ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্কুল–কলেজ–মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের হাটখোলা জামে মসজিদ চত্বরে এসে জমায়েত হন। ভোলা জেলার সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার আহ্বায়ক মাওলানা মোবাশ্বিরুল হকের (নাঈম) সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় পুলিশের কড়া সমালোচনা করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমির মাওলানা কামাল হোসাইন, পৌরসভার আমির মাওলানা জামাল উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা জেলার (উত্তর) সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান ওরফে মোমতাজী, সহসভাপতি মাওলানা ওবায়েদ বিন মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, জেলা হেফাজত ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান আজাদী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক মাকছুদুর রহমান, ভোলা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মীর বেলায়েত হোসেন, জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান মিজানুর রহমান প্রমুখ।
বক্তারা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাঁরা ভোলায় হরতাল, অবরোধ, ডিসি-এসপি কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ডিসি ও এসপির বদলি দাবি করেন। কয়েক মাস ধরে ভোলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই বলেও দাবি করেন বক্তারা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহান সরকার বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আমিনুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুতই আসামি গ্রেপ্তার হবে।
একই তথ্য জানান ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু শাহাদাত মো. হাচনাইন পারভেজ। তিনি বলেন, নিহত আমিনুল হকের স্ত্রী হালিমা বিনতে কামাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।