এডিশন ডেস্কঃ
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে বিপুল পরিমাণ শামুক এবং ঝিনুক সংগ্রহ করে পাচারের অভিযোগে এলাকাজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। স্থানীয় পরিবেশ ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে—সংগঠিত একটি চক্র বহু অঞ্চল জুড়ে রাতের আঁধারে এসব জলজ প্রাণী সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে খুলনা-পদ্মা অঞ্চলে সরবরাহ করছে; এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও নদীর মাটি-জলের ভারসাম্য হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের উদ্ধৃতি ও অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে মূল অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে; তাঁর নেতৃত্বে ইউনুস আলী, রমজান নগর মিঠু, আশারাফ, হানিফ ও কৈখালী গ্রামের এশার আলী প্রভৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা সুন্দরবনের পশুরতলা খাল, মাদার নদী, জয়াখালী খাল প্রভৃতি স্থান থেকে শামুক–ঝিনুক সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ভূ-অবকাঠামোতে জড়ো করে এবং পরে বিক্রি বা পাচারের ব্যবস্থা করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক ও ঝিনুক শুধু অর্থনৈতিক মূল্যবান নয়; এসব প্রজাতি নদীর তলদেশের মাটির গঠন ও উর্বরতা রক্ষায় সহায়তা করে, পাশাপাশি মাছসহ অন্যান্য জলজ জীবের খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশবিদ অধ্যক্ষ আশেক এলাহী বলেন, “শামুক–ঝিনুকের চলাচল মাটির গুণগত মান ধরে রাখে; অতিমাত্রায় আহরণ দিলে নদীর অর্থনৈতিক ও জৈবিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।”
বন বিভাগ, ফরেস্ট টহল দল এবং নৌ পুলিশ সম্প্রতি কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে—মালঞ্চ নদী থেকে শামুক ভর্তি নৌকা জব্দ এবং কদমতলা স্টেশনে দশ বস্তা উদ্ধারসহ কিছু শামুক নদীতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ফজলুল হক জানান, “এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে; নদী সংরক্ষণ আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের উভয় ধারায় লঙ্ঘন ঘটলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবেশকর্মী কামরুল ইসলাম মনে করেন—শুধু নৌকা জব্দ করলেই সমস্যা শেষ হবে না; চক্রের মূল উৎস ও চালকদলের সঙ্গে আর্থিক–সামাজিক যোগসূত্র চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, “জনচেতনা বাড়াতে হবে; স্থানীয়দের সহযোগিতা না থাকলে এসব চক্রকে নির্মূল করা কঠিন।”
আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগের কিছুটা স্বীকার করে বলেন—তিনি শামুক কেনেন এবং তা পদ্মা হ্যাচারিতে সরবরাহ করেন; বলেন, কিছু ক্ষেত্রে জেলেরা তাদের কাছেই শামুক নিয়ে আসে এবং তাদেরও সরকারি অনুমোদন আছে বলে দাবি করেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা স্পষ্ট করলেন—শ্যামনগর তথা সুন্দরবন এলাকার শামুক আহরণ বা পরিবহন বেআইনি; মৎস্য দফতর থেকে সুস্পষ্টভাবে অনুমতি দেওয়া হয় না এবং বনভিত্তিক এলাকায় শিকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা মো: তৌহিদ হাসান বলেন, সুন্দরবন থেকে কোনো প্রজাতি আহরণ করলে তা আইনভঙ্গ; বন বিভাগের অভিযানে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে। রেঞ্জ অফিসার জানান, অভিযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং অপরাধ প্রবণ এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা ও বিকল্প জীবিকা পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও বলা হচ্ছে।
শামুক–ঝিনুকের অবৈধ আহরণ ও পাচার রোখা না গেলে সুন্দরবনের নানাবিধ জীববৈচিত্র্য ও ক্ষুদ্রজীবের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা ঝুঁকির মুখে পড়বে—এই সতর্কতা বিভিন্ন পরিবেশ কর্মী ও বন কর্মকর্তা একমত। এলাকার অবস্থা স্থির করতে বনবিভাগ, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ছাড়া চলবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।