এডিশন ডেস্ক::
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় অবশেষে আদালতে হাজির করা হলো শাহজাদীকে। হাসপাতালের বিছানা থেকে সোজা আদালতের কাঠগড়ায়—কিন্তু তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মতো একজন আইনজীবীও ছিলেন না। কেউ জামিন আবেদন করলেন না, কেউ বললেন না একটি শব্দ। মূলত আদালতের নির্দেশে যেতে হলো কারাগারে।
তবে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য ছিল সেই মুহূর্তে—শুধু শাহজাদী নন, তাঁর বুকের দুধের আশায় কাঁদতে থাকা ১১ দিনের কন্যাশিশুকেও মায়ের সঙ্গেই নিয়ে যাওয়া হলো খুলনা জেলা কারাগারে। আদালতে উপস্থিত অনেকেই শিশুটিকে মায়ের কোলে কারাগারের পথে যেতে দেখে চোখ মুছতে বাধ্য হয়েছেন।
বাগেরহাটের রামপালের সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহজাদীর সংসারে চার কন্যা। পরিবার ও স্বামীর চাপ ছিল—অন্তত এবার যেন ছেলে সন্তান আসে। কিন্তু গত ১১ সেপ্টেম্বর সিজারিয়ানের মাধ্যমে আবারও কন্যাশিশুর জন্ম হয়। খবর পেয়েই স্বামী হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর আর ফিরে আসেননি, যোগাযোগও রাখেননি।
চরম মানসিক চাপে দিশেহারা শাহজাদী এক অমানবিক ভুল করে বসেন। ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে একই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া অন্য এক নারীর ছেলে নবজাতক তিনি কোলে তুলে নেন। সিসি ক্যামেরা ফুটেজে ধরা পড়ে তাঁর সেই মুহূর্ত। পুলিশের তৎপরতায় সেদিন সন্ধ্যায়ই শিশুটি উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তার হন শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমও। মানবপাচার আইনে মামলা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে।
আজ যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন শাহজাদী, তখনও তাঁর পাশে ছিলেন না স্বামী কিংবা পরিবারের কোনো ঘনিষ্ঠজন। দুসম্পর্কের এক ভাই কেবল বিল মেটাতে এগিয়ে এসেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহীন কবির বলেন, “আসামি সুস্থ হওয়ায় আইন অনুযায়ী আদালতে হাজির করা হয়েছে।”
কিন্তু আদালতের কাঠগড়ায় মা ও শিশুর প্রতি সহানুভূতির কথা কেউ তুললেন না। প্রথা অনুযায়ী নবজাতককে মায়ের সঙ্গেই রাখা হলো।
মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক দর্শক ধীরে বলছিলেন— শিশুর কোনো দোষ নেই। অথচ জন্মের পর প্রথম আশ্রয়টাই হলো কারাগার।
এটি শুধু এক মায়ের অপরাধের গল্প নয়; সমাজ ও পরিবার থেকে বহিষ্কৃত এক নারীর করুণ পরিণতি। আর সেই পরিণতির দায় একদিন কি শুধু শাহজাদীর কাঁধেই বর্তাবে?