এডিশন ডেস্কঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় জনপদ বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, পদ্মপুকুর ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় লোনা পানির সংকটে ব্যাপকহারে চিংড়ি ও কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এতে চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বড় ধরনের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বেড়িবাঁধের ভেতরে বসানো অবৈধ নাইনটি পাইপ অপসারণের পর থেকেই এই সংকট দেখা দেয়। এতদিন এসব পাইপের মাধ্যমে নদী থেকে লোনা পানি তুলে ঘেরে সরবরাহ করতেন ঘের মালিকরা। কিন্তু পাইপগুলো অপসারণ করায় নতুন করে পানি ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না। পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসানোর ফলে প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে হাজারো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এজন্যই সরকারি নির্দেশে পাইপ অপসারণ করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় বাগদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৩২৮টি এবং কাঁকড়ার ঘের রয়েছে ১৮২ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১১০টি। হঠাৎ নাইনটি পাইপ তুলে দেওয়ায় এসব ঘের এখন তীব্র পানিসঙ্কটে পড়েছে।
স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী বিকাশ মন্ডল জানান, পানির প্রবাহ বন্ধ থাকায় ঘেরের পানি দ্রুত গরম হয়ে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতিদিন শত শত চিংড়ি ও কাঁকড়া মারা পড়ছে। একই অভিযোগ করে অনেক ঘের মালিক বলেছেন, মাছ ও কাঁকড়া চাষই তাদের প্রধান জীবিকা, কিন্তু পানির ঘাটতির কারণে তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে ঋণগ্রস্তও হয়ে গেছেন।
দুর্গাবাটি এলাকার ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র বলেন, “বেড়িবাঁধে পাইপ বসানো আইনত নিষিদ্ধ, তবে বিকল্প ব্যবস্থা না করে পাইপগুলো একসাথে তুলে ফেলার ফলে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। বিকল্প খাল, স্লুইসগেট বা বৈধ জলপ্রবাহের ব্যবস্থা জরুরি।”
স্থানীয় কাঁকড়া ব্যবসায়ী অনাথ মন্ডল জানান, “বুড়িগোয়ালিনীসহ আশপাশের এলাকায় হাজারো পরিবার ঘেরনির্ভর। এভাবে পানি সংকট চলতে থাকলে মাছ ও কাঁকড়ার উৎপাদনে ধস নামবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর উপজেলায় বাগদা চিংড়ির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন এবং কাঁকড়ার ১৫ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন। তিনি স্বীকার করেন, “লোনা পানি উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় উৎপাদন কমবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বলেন, “বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে বসানো অবৈধ পাইপ নদীর বাঁধ ভাঙার অন্যতম কারণ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধ রক্ষায় এসব পাইপ অপসারণ করা হচ্ছে।”
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, “উপকূল জুড়ে নির্মিত বহু স্লুইসগেট দীর্ঘদিন ধরে অযত্নে পড়ে আছে। সেগুলো সংস্কার করা হলে আর পানি ঘাটতির মুখে পড়তে হতো না।”
স্থানীয়দের দাবি, বিকল্প পানির উৎস নিশ্চিত করা না হলে উপকূলের হাজারো মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।