এডিশন ডেস্ক::
বিধান চন্দ্র মন্ডল এক বছর আগে ও পেশায় ছিলেন একজন মৎস্যজীবী। সরকারি খাল ও বদ্ধ নদী ইজারা নিয়ে করতেন মাছ চাষ। এভাবেই মাছ চাষ করে কোন রকমে চলতো সংসার চললেও ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। পূর্বের মতো উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারের ১৫ একর আয়তনের ডিহিবুড়া সরকারি খালটি ৩ বছর মেয়াদি ইজারা নেয় বিধান।
ইজারার প্রথম বছর স্থানীয় সমস্যার কারণে ফেলে রাখে খালটি। চলতি বছর ১৫ একর খালের ১৩ একর জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়।
দুই একর নিজের অনুকূলে রেখে মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মাছ চাষের পাশাপাশি কৃষি ফসল উৎপাদন করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী খালের দুই পাড়ে পতিত পড়ে থাকা প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চলতি বছরের শুরু থেকে কৃষি ফসল ( ফল ও সবজি) চাষ শুরু করে।
ব্যক্তি মালিকানা এ জমি গাছপালা, আগাছা আর বন জঙ্গলে ভরা ছিল। বাস করতো ভয়ংকর বন্য প্রাণী আর বিষধর সাপ।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ, বিভিন্ন সফল কৃষকের কৃষি খামার পরিদর্শন এবং ইউটিউব দেখে পরিকল্পিত ভাবে বৃহৎ পরিসরে পতিত ওই জমিতে বিধান দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের ফল ও সবজি চাষ করেন।
বর্তমানে তার কৃষি খামার বা প্রকল্পে অফসিজন তরমুজ, সাম্মাম, বাঙ্গী, ষ্টেবরী, শশা, বাদাম, চুইঝাল, আদা, করল্লা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, ওল, আলু, কচু সহ কমপক্ষে ১৭৫ প্রকার দেশী-বিদেশী ফল ও সবজি রয়েছে।
নিজে সহ প্রতিদিন ৫০ জন শ্রমিক নিয়মিত খামারে কাজ করছে। প্রতিটি ফল এবং সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি খামারের দিগন্ত জুড়ে সবুজের সমারোহ এবং মাঁচা কিংবা জাল ভরে গেছে ফল আর সবজিতে ।
দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোন কৃষি খামার। দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক কৃষি খামার টি দেখে যে কেউ বলবে এটি বিদেশি কোন ইকো ট্যুরিজম।
প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক এবং দর্শনার্থীরা কৃষি খামারে ভিড় জমান। খামারের নয়নাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্য সব শ্রেণির মানুষ কে মুগ্ধ করছে।
সবজি অনেকটা আগে থেকে বাজারজাত শুরু করলে ও তরমুজ ও সাম্মাম সহ অন্যান্য ফল গত দুই সপ্তাহ হলো বাজারজাত করছেন। উৎপাদিত ফল ও সবজি খামার থেকেই পাইকারি বিক্রয় করছেন। প্রতি কেজি তরমুজ ৪০ এবং প্রতি কেজি সাম্মাম ৬০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং সিজন শেষে কেনা-বেচা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি উদ্দোক্তা বিধান চন্দ্র মন্ডল।
সঠিক পরিকল্পনা আর কঠোর পরিশ্রমে প্রথম বছরেই কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে মৎস্যজীবী থেকে মডেল এবং স্মার্ট কৃষক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন কৃষক বিধান।
বিধান খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের পূর্ব গজালিয়া গ্রামের মৃত দুখিরাম মন্ডলের ছেলে।
তার এই সাফল্যে লবন অধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষির অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। এমন কৃষি খামার করতে আগ্রহী হয়েছেন সাধারণ অনেক কৃষক।
কালিনগর এলাকার কৃষক সঞ্জয় বালা বলেন আমাদের ২২ নং পোল্ডার কৃষির জন্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানকার কৃষকরা কমবেশি সবাই কৃষি কাজ করি। কিন্তু সেটা গতানুগতিক ধারার কৃষি। বিধান যেটা করেছে অনুকরণীয়।
আগামীতে বিধান কে অনুসরণ করে এমন কৃষি খামার করতে আমার মতো অনেক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষি খামারের মাধ্যমে এলাকার বহু মানুষের কর্মসংস্থান ও হয়েছে।
খামারে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন দিনমজুর রবীন মন্ডল ও সিমলা বালা। কৃষিতে যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে কৃষক বিধান যার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে কৃষি খাবার টি পরিদর্শন করে এমনটাই জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন।
কৃষক বিধান চন্দ্র মন্ডল বলেন প্রথম বছরেই এতটা সফলতা আসবে এমন ধারণা করিনি। তবে উদ্যোগ টি সফল করতে কঠোর পরিশ্রম আর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। পতিত জমি আবাদযোগ্য করার যোগ্য করার পর দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের ফল ও সবজির বীজ সংগ্রহ করি।
এরপর কৃষি বিভাগের পরামর্শ, বিভিন্ন উন্নত খামার পরিদর্শন এবং ইউটিউব দেখে ফসলের পরিচর্যা এবং রোগ বালাই প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে খামারে ১৭৫ প্রকারের দেশি-বিদেশি সবজি ও ফল রয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ৩৮ টি দেশের ফল ও সবজি রয়েছে। এর বেশিরভাগ বীজ অনলাইনে সংগ্রহ করা হয়। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে। অফসিজন তরমুজ ও সাম্মাম সহ বেশির ভাগ ফল ও সবজি বাজারজাত করা হচ্ছে। পাইকারারা খামার থেকেই উৎপাদিত পন্য নিয়ে যায়।
তবে যোগাযোগ এবং ভালো পরিবহণ ব্যবস্থা থাকলে ভালো দাম পাওয়া যেত বলে তিনি জানান। সিজন শেষে বিক্রয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষক বিধান চন্দ্র মন্ডল।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ একরামুল হোসেন বলেন খামার শুরু করার আগেই কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিতে আসছিল কৃষক বিধান।
ওই সময় তার মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখেছিলাম। তার আগ্রহের কারণে তাকে এ ধরনের কৃষি খামার করার পরামর্শ এবং প্রাথমিক কিছু বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম। তার এ সাফল্যে কৃষি বিভাগ ও গর্বিত। আশা করছি তাকে অনুসরণ করে সাধারণ কৃষকরাও এমন কৃষিতে এগিয়ে আসবে।
এ ধরনের কৃষি ব্যবস্থা উপকূলীয় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন।