খুলনা এডিশন::
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে নিজেদের প্রস্তুতি জোরদার করেছেন। বেশিরভাগ প্রার্থীই নতুন মুখ হলেও তরুণ উদ্যম, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং স্থানীয় উন্নয়নে ভূমিকার কারণে তারা ইতিমধ্যেই আলোচনায় এসেছেন।
খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনে এনসিপির প্রায় এক ডজন নেতৃবৃন্দ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছেন। প্রার্থীরা মাঠ পর্যায়ের প্রচারণার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনোনয়নের জন্যও লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা-১ আসনে দক্ষিণাঞ্চলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন এনসিপির ওয়াহিদুজ্জামান। দাকোপ ও বটিয়াঘাটা এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও সড়ক উন্নয়নে ভূমিকার মাধ্যমে তিনি স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পেয়েছেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শতাধিক মন্দির পরিদর্শন করে তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। এ আসনে আরও মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পালী ডেভিড রাজু এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী এডভোকেট প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পূর্বে জাতীয় পার্টির খুলনা জেলা শাখার আইন সম্পাদক ছিলেন।
খুলনা-২ আসনে দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল হক সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি নিয়মিতভাবে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ আসনে আরও মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট মাসূদুর রহমান।
খুলনা-৩ আসনে এনসিপির সম্ভাব্য হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন এস. এম. আরিফুর রহমান মিঠু। খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় তার শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। জানা গেছে, তার দানকৃত জমিতেই খুলনা জেলা ও মহানগর এনসিপির কার্যালয় নির্মিত হয়েছে।
খুলনা-৪ আসনে এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ। এছাড়া আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা মোল্লা শওকাত হোসেন বাবুল ও জেলা এনসিপি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম। জানা গেছে, সাবেক এক বিএনপি নেতাও এ আসনে এনসিপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
খুলনা-৫ আসনে ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় এনসিপির হয়ে সক্রিয় রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক তানজিল মাহমুদ। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও যোগাযোগ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
খুলনা-৬ আসনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জেলা সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। পাইকগাছা ও কয়রা অঞ্চলে তার শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। দুর্গাপূজায় তিনি বিভিন্ন মন্দিরে উপহার পাঠিয়ে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একই আসনে মনোনয়ন চাইছেন জেলা যুগ্ম সমন্বয়ক এডভোকেট মাফতুন আহমেদ, যিনি আজাদ বার্তার সম্পাদক এবং পেশায় আইনজীবী। সামাজিকভাবে নির্লোভ, আপোষহীন চরিত্রের অধিকারী মাফতুন আহমেদ খুলনা ও পাইকগাছা অঞ্চলে শিক্ষাবিদ পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বলও এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির এই তরুণ ও উদ্যমী নেতৃত্ব খুলনার নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। যদিও দলটি তুলনামূলক নতুন, তবুও তাদের সাংগঠনিক গতিশীলতা আসন্ন নির্বাচনে চমক সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।