এডিশন ডেস্কঃ
সশস্ত্র বাহিনী বিজিবি কর্তৃক বিনা অনুমতিতে কাস্টমস ঘোষিত বন্ডেড এলাকায় প্রবেশ ও পণ্যবাহী ট্রাক বন্দর হতে এক্সিট নোট ও গেট পাস ব্যতীত জোরপূর্বক বের করে নেয়া প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়েছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত ১২ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখ, রাত আনুমানিক ০৭:৪৫ ঘটিকার সময় ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টমস ঘোষিত বন্ডেড এলাকায় একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এম/এস হুসাইন এন্টারপ্রাইজ ও এর মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট ‘জেবা এন্টারপ্রাইজ’ ভারতীয় দুটি ট্রাকের মাধ্যমে “Mustard Seed Oil Cake (সরিষার খৈল)” নামীয় পণ্য ঘোষণা দিয়ে একটি চালান আমদানি করে। গোপন সংবাদ থাকায় উক্ত পণ্যচালানটি কাস্টমস কর্তৃক শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উক্ত কার্যক্রম চলাকালে ১০-১২ জন সশস্ত্র বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ভোমরা স্থল বন্দরের বন্ডেড এলাকায় প্রবেশ করে আলোচ্য আমদানিকৃত পণ্যচালানের দুটি ভারতীয় ট্রাকের মধ্যে একটি ট্রাক তল্লাশি করে। তৎক্ষণাৎ, কাস্টমস কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিজিবি সদস্যদের অবহিত করেন যে, কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী কাস্টমস ঘোষিত বন্ডেড এলাকায় অন্য কোনো সংস্থার অনধিকার প্রবেশ বা তল্লাশি আইনসিদ্ধ নয়। এখানে উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিমালা ও বিদ্যমান আইনি কাঠামো অনুসারে বন্ডেড এলাকা সম্পূর্ণরূপে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন। বন্ডেড এলাকার বৈধ কাস্টডিয়ান হলো স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরীক্ষণ ও শুল্কায়নসহ পণ্যের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার এখতিয়ার কেবল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের।
পরবর্তীতে, বিজিবি কর্তৃক উক্ত একটি ভারতীয় ট্রাক ও তার পণ্যসমূহ আংশিকভাবে দুটি বাংলাদেশী ট্রাকে আনলোড করে তিনটি ট্রাকই কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের এক্সিট নোট ও গেট পাস ছাড়া বন্দরের বাইরে সম্পূর্ণ আইনবহির্ভুতভাবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। সে সময় বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিজিবির সশস্ত্র সদস্যরা জোরপূর্বক গেট খুলে পণ্যবাহী ট্রাকটি বের করে নিয়ে যায় (যা বন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে ধারণকৃত)। যার ফলে বন্দর এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে ও একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অপরদিকে, কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে থাকা অপর ট্রাকটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ঘোষণা অনুযায়ী “Mustard Seed Oil Cake (সরিষার খৈল)” নামীয় পণ্যের সাথে ঘোষণা বহির্ভুতভাবে ভারতীয় শাড়ি (৮৭১৬ পিস) ও লেহেঙ্গা (৬৮ পিস) পাওয়া যায়। যা কাস্টমস আইন, ২০২৩ অনুযায়ী শাস্তিমূলক অপরাধ। উক্ত আইনের ধারা অনুযায়ী আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রণীত আদেশ নং ২৩৪/২০১৭/কাস্টমস, তারিখ: ১৫ নভেম্বর ২০১৭, অনুযায়ী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে “বর্ডার গার্ড আইন, ২০১০ এর ধারা ১২” এর প্রদত্ত ক্ষমতা “ঘোষিত কাস্টমস বন্দর/স্থলবন্দর/বিমানবন্দর/কাস্টমস এলাকা”-এর ভেতরে প্রযোজ্য নয় বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
অর্থাৎ, বর্ডার গার্ড আইন, ২০১০ এর ধারা ১২ এর উল্লিখিত কাস্টমস আইন, ২০২৩ এর দ্বারা নির্ধারিত সীমা ও শর্তের বাইরে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তা হবে একান্তই আইন বহির্ভুত। এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পত্র নং ০৮.০১.০০০০.০৬৭.০৬.০০১.১৪-৩১২, তারিখ: ১৩.১১.২০১৯ খ্রি. অনুসারে কাস্টমসের এখতিয়ারভুক্ত এলাকায় অন্য কোনো সংস্থার হস্তক্ষেপ আইন বহির্ভুত ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে নিষ্পত্তিকৃত “Reazul Karim Vs State” মামলার (৩৬ ডিএলআর এডি ১৯৮৪) রায়ে আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, পণ্যচালান ও যাত্রী পরীক্ষার দায়িত্ব কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এবং উক্ত কার্যক্রমে অন্য কোনো সংস্থার হস্তক্ষেপ আইনি সীমা লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে।
বিষয় টি নিয়ে ভোমরা স্থলবন্দর কতৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ আতিকুল ইসলাম জানান, বিজিবি-র এমন ঘটনায় বন্দর কতৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, এমন কার্যক্রমের ফলে নিয়মিত আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম, জরুরী কাস্টমস পরিষেবা ও সর্বোপরি জাতীয় রাজস্ব আদায় কার্যক্রম পরিচালনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হবে। এ ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষ কে অবহিত করা হয়েছে।