খুলনা এডিশন::
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মেয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জাল সনদধারী শিক্ষক পুনর্বহাল এবং টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে এ কে. এম. মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে উপপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চল বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) আরিফা এদিব চৌধুরী নিয়োগ পাওয়ার পর তার কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি তার সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি (নেকটার), বগুড়া-তে পাঠায়।
পরবর্তীতে নেকটারের উপপরিচালক কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, সনদটি নেকটার কর্তৃক ইস্যুকৃত নয়, অর্থাৎ সেটি জাল বা ভুয়া।
এ প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শেষে ১২ এপ্রিল ২০২২ তারিখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখে শিক্ষক আরিফা এদিব চৌধুরীকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে।
বরখাস্তের পর তার এমপিও নাম কর্তনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করলেও, পরবর্তীতে তার স্বামী আলতাফ হোসেনকে এডহক কমিটির সভাপতি করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বহালের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমনকি, বকেয়া বেতন–ভাতাদি উত্তোলনের জন্যও নথিপত্রে কৌশলে পরিবর্তনের পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সুফিয়ান গাজী-কে ৯ম শ্রেণি পাসের জাল সনদ দিয়ে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় চাকরি প্রত্যাশী ফিরোজ আলমের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নেওয়া হলেও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রতারণার শিকার ফিরোজ আলম সাতক্ষীরা আমলী আদালতে সিআর ৭৪০/২২ (শ্যাম) মামলা দায়ের করেন।
পরে তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখাকে দেওয়া হলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুর রহমান ফারাজি ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর জমাকৃত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এছাড়াও অনুরূপভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে ৭৬৯/২২ (শ্যাম) ও ৭৭০/২২ (শ্যাম) দুটি মামলা দায়ের হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও ভয়ভীতির কারণে মামলাগুলো খারিজ হয়ে যায় বলে অভিযোগকারীদের দাবি।
বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও, প্রধান শিক্ষক দুই দফা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।
তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মেয়াজ্জেম হোসেন বলেন,
“এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান থাকায় সংশ্লিষ্টদের নাম কর্তন বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাল সনদ ও নিয়োগ বাণিজ্যের মতো গুরুতর অভিযোগ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।