খুলনা এডিশন::
সুন্দরবনে খাল পুনঃ খননের সময় বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ উপড়ে ফেলে মাটি চাঁপা দিয়েছে কাজটির দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন-বিভাগের যৌথ তদারকি কমিটির নাকের ডগায় এই অনিয়ম করে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড কোং। গাছ বিক্রির বিধান থাকলেও তদারকি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বহীনতার কারণে কোটি কোটি টাকার গাছ টেন্ডার দেওয়ার কোন ব্যবস্থা হয়নি। এতে সরকার হারিয়েছে মোটা অংকের রাজস্ব। এমন কর্মকান্ডে স্থানীয় পরিবেশবাদী ও বন-প্রেমিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খননের শুরুতে তারা রাফ কাটিংয়ের সময় খালের দু-পাশের কৃত্রিম বনায়নের বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির অসংখ্য গাছ এক্সকেবেটর দিয়ে উপড়ে ফেলে মাটি চাঁপা দিয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে ঐ গাছ বিক্রির বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ধ্বংস হয়েছে মূল্যবান বনজ সম্পদ। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি পরিবেশের উপর পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার ঐ খাল পুনঃ খননের অনুকুলে ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। যা টেন্ডারের মাধ্যমে ঐ খনন কাজের দায়িত্ব পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন এন্ড কোং। সেই মোতাবেক পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন-বিভাগের যৌথ তত্বাবধানে গত জুলাই মাসের দিকে কাজ শুরু করে ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বন সংলগ্ন সেখানকার সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও পান্না হাওলাদার বলেন, ধানসাগর ষ্টেশন সংলগ্ন আড়োয়ার বেড় খালটি ভোলা নদী থেকে শ্যালা নদী পর্যন্ত প্রবাহিত। ঐ খালের দু-পাশের রেইন্টি, চাম্বল, আকাশমনি, মেহগনি ও অর্জুন সহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক গাছ ছিল। যার বর্তমান বাজার মুল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। খালটি পূনঃ খননের কারনে এসব গাছ এক্সকেবেটর দিয়ে উপড়ে ফেলে মাটি চাঁপা দেয়া হয়েছে বলে জানান এই জন-প্রতিনিধি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, খননকৃত ৯ কিলোমিটার জায়গায় অগণিত বন সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের মতে, বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ঐ মূল্যবান গাছ উপড়ে ফেলে মাটি চাঁপা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে বন সম্পদ বিক্রির বিধান থাকলেও তা মানেননি সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশবাদী ও বনপ্রেমী, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম লিটন তালুকদার বলেন, এভাবে সুন্দরবনের বনাঞ্চলের জীবিত গাছ নির্বিচারে ধ্বংস করা শুধু সরকারের রাজস্ব ক্ষতি নয় বরং পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য এক গুরুতর হুমকি।
স্থানীয় পশ্চিম রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা জহুর আলী শেখের পুত্র আব্দুল হালিম শেখ, ছন্দু হাওলাদারের পুত্র আব্দুল আজিজ হাওলাদার, আইজুদ্দিন শেখের পুত্র আব্দুল হক শেখ বলেন, খনন কালে খালের দুই পাশের বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মোটা মোটা গাছগুলো যেভাবে মেশিন দিয়ে উগলে ফেলে মাটি চাঁপা দিয়েছে তাতে আমরা এলাকাবাসী হতবাগ। গাছগুলো যদি বিক্রি করতো তাহলে সরকারের কিছু টাকা হতো।
ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা দায় চাপাচ্ছেন একে অন্যের উপরে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, গাছ মাটি চাঁপা দেওয়ার ঘটনা আমি জানিনা। সেখানে দেশীয় প্রজাতির কোন গাছ ছিল এমন কোন তথ্য অধঃস্তন কর্মকর্তা আমাকে জানায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আমাকে জানালে গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা যেত।
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন সংলগ্ন আড়োয়ার বেড় খাল খননে এমন কান্ড ঘটলেও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক দিপন চন্দ্র দাস বলেন, খনন কাজ দেখতে আমি এখনও যাইনি। তবে সেখানে কোন গাছই ছিল না। মাটি চাঁপা দেওয়ার ঘটনা অকল্পনীয়।
দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন বলেন, এমন ঘটনা আমি জানিনা। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সরকারের রাজস্ব হারানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।বস্থা নেয়া হবে।