ঢাকা অফিস:
কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃ*ত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃ*ত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে সর্ব্বোচ আদালত এ রায় দেন।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন। এই রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, জামায়াতের ঢাকা উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, মাসুদ সাঈদী, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (০৮ মে) সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়। মঙ্গলবার (০৬ মে) হয় প্রথম দিনের শুনানি।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যে যুক্তিতর্ক তারা তুলে ধরেছেন তাতে খালাস পাবেন এই জামায়াত নেতা। এর আগে গত ৮ মে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম।
এ ছাড়া পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।