ঢাকা অফিস:
‘আমি এখন মুক্ত, স্বাধীন দেশের নাগরিক’- এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর আজ বুধবার জেল থেকে মুক্তির পর শাহবাগে তার মুক্ত উপলক্ষে জামায়াতের শোকরানা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ছবি : আহসানুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিস্ট আমলের শহিদ এবং গাজীদের স্বরণ করেন, তাদের কৃতজ্ঞতা জানান ও আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ১৪ বছর পর আজকে সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। এই স্বাধীন দেশের আমি স্বাধীন নাগরিক একজন।
তিনি বলেন, আমি প্রথমেই মহামান্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায়বিচার ছিলো না। আদালতকে ব্যাবহার করা হয়েছে। এ জন্য আশা করি সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা-আকাঙ্খা অনুয়ায়ী, জনগণ যাতে ন্যায় বিচার পান সেই ব্যবস্থা করবেন।
ছবি : মেহেদী হাসান রেজা, স্টাফ রিপোর্টার
জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমার মামলায় যে সমস্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছিলো, আমি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি তারা অত্যন্ত সুন্দর সাবলিল যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে আমার মামলার অসারতা, দূর্বলতাগুলো প্রকাশ করতে পেরেছেন। এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে এই মামলার মাধ্যমে অতিতের সরকার কীভাবে আমাদের উপর, আমাদের ভাইদের উপর নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তাদেকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই যাদের কারণে আমি মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি সেই ৩৬শে জুলাই ৫ আগস্টের মাহা বিপ্লবী মাহানায়কদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আন্দোরনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হতে বাধ্য হয়েছিলো। আমি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাতে চাই ছাত্রসমাজকে যারা অতীতের গর্ব অহংকারকে পুঃন প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ছাত্র সমাজই রজপথে রক্ত ঢেলে এই সাড়ে চৌদ্দ-পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা রাজপতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে, যার কারণে ফ্যাসিস্টের সব দম্ভ-গর্ব চুর্ণ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই – ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, সকল পেশাজীবী, সকল নারী-পুরুষ এমনকি শিশু বাচ্চাদের যাদেরকে আমি দেখেছি তারা রাজপথে সেদিন নেমে এসেছিলো। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী জনগনের পক্ষ নেয়ার কারণে আজকে আমরা এমন অবস্থায় আসতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, যদিও আমি একজন নগন্য ব্যক্তি তারপরও আমি শুনেছি, অনেকেই আমার মুক্তির জন্য রোজা রেখেছেন, অনেকে মানত করেছেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। হয়তো এটা ইসলামী আন্দোলনকে মহব্বত করার কারণে, ইসলামী আন্দোলনকে ভালোবাসার কারণে। তিনি আল্লাহর কাছে তাদের উত্তম প্রতিদান কামনা করেন।
তিনি দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্বরণ করেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্ব যারা শহীদ হয়েছেন। জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবুল কাদের মোল্লা যারা স্বৈরাচার সরকারের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আজহারুল ইসলাম বলেন, তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জুডিসিয়াল কিলিং করা হয়েছে।
অল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে স্বরণ করে তিনি বলেন, আমাদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র, সারা দুনিয়ার পরিচিত, আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতি সম্পন্ন আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা চিকিৎসায় ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে।