সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশাল বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর চাহিদা মাথায় রেখে দেশিয় পণ্য আমদানি করেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। দেশটিতে নিয়মিত রপ্তানির তালিকায় রয়েছে পোশাক, ফলমূল, সবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এসব পণ্য ছোট-বড় সুপার শপ ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাওয়া যায়। দেশটি থেকে রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে এসব পণ্য থেকে।
চলতি অর্থ বছর দেশটি থেকে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে নিট ওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, ও পাটজাত পণ্য থেকে। গেল বছর এগ্রো প্রোডাক্টও ছিল এই তালিকায়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরে দেশটি থেকে ৪৮ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশটি থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ২৮ কোটি ইউএস ডলার। লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো যা ২০ কোটি ডলার পিছিয়ে।
রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমন মোহাম্মদ হাকিম বলেন, ‘আমরা আগে যে শিপমেন্ট ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যেতাম, এখন সেটা ৪৫ দিন লাগে।’
রেডিমেড গার্মেন্টস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যদি ঢাকা থেকে দুবাই সরাসরি শিপমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে আমাদের কাছে এটা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।’
দুবাই-বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছর থেকে দেশটিতে হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি কমতে শুরু করে। যে কারণে ধারাবাহিকভাবে কমছে রপ্তানি আয়। চলতি বছরেও হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানি বাড়াতে হলে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ড চার্জ কমানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি ফল ও সবজির মতো পণ্যের আউটপুট প্যাকেজিং বিশ্বমানের করার দাবি তাদের।
দেশে উৎপাদিত পণ্যের জন্য বাজার গবেষণাসহ আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা, রপ্তানি ঝুড়ি সম্প্রসারণ করতে ওষুধ, মিনিকেট চাল, মৌসুমি ফল ও সবজি, বায়ো ডিসপোজেবল প্লাস্টিক পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে বলছেন প্রবাসীরা।
এস কে গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান হাজী শেখ কামাল বলেন, ‘আমরা যারা এখানে বাংলাদেশি প্রবাসীরা আছি, তারা কিন্তু বাংলাদেশি চালটা এখনো পাই না, ভারতীয়টাই খাই।’
দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলছেন, গতবছর দেশের অস্থিতিশীলতায় রপ্তানি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে এই আয়ে ফিরতে পারে সমতা।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমরা একটা ইকোনমিক পার্টনারশিপের কথা ভাবি, যে পার্টনারশিপ হলে আমরা মনে করবো যে সংযুক্ত আরব আমিরাত আমাদেরকে একটা ইনিভাইটেবল পার্টনার হিসেবে গণ্য করবে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হোম টেক্সটাইল ও কৃষি পণ্যের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি এই খাতে আয় বাড়াতে হলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে অন্তত দুটি সরাসরি কার্গো ফ্লাইট নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানি নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরো বেশি করে এগিয়ে আসার দাবিও তাদের।