ঢাকা অফিস
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ এক চূড়ান্ত সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পরাজিত শক্তি নতুন সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার চেষ্টা করেছে, এবং সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য এখন বড় ধরনের হামলা চালিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুই নেতার নেতৃত্বে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি পরিকল্পনা চলছে। তারা হলেন— বাহাউদ্দিন নাছিম এবং শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, আওয়ামী লীগ গত ৮ জুলাই একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন করেছে, যেখানে ৪০০ জন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। যদিও শেখর এবং নাছিম বিদেশে অবস্থান করছেন, তবে আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা এবং শামীমা নাসরিন শম্পার নেতৃত্বে এই নাশকতার ছক বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল শাহবাগে জনসমাগম ঘটানো এবং শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ষড়যন্ত্র করা।
এছাড়া, তাদের পরিকল্পনায় আরও ছিল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। এর জন্য শম্পা, সোহেল রানা সহ ১৪ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণের জন্য কনভেনশন হলটি ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নাসরিন শম্পা। তিনি গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান চালানোর আড়ালে কনভেনশন হলটি ভাড়া নেন। প্রশিক্ষণের সময়, অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন, যেমন রাজমিস্ত্রি, কার্পেন্টার, বাগান পরিচর্যাকারী ইত্যাদি।
এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করলে কনভেনশন হলের ম্যানেজার, যারা বিষয়টি জানতেন, তারা তদন্তকারীদের সামনে সবকিছু প্রকাশ করেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে প্রথমে তথ্য পায় এনএসআই এবং এসবি। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশ শম্পা ও সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত ছিল দলের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম গতি বাড়ানো, রাজপথে নামা, দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য লোকজন কোথায় অবস্থান করবে, কিভাবে আত্মগোপনে থাকবে, কীভাবে যোগাযোগ করবে, এবং জনসমর্থন বাড়ানোর মতো বিষয়গুলি।
গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে বড় ধরনের হামলা হতে পারে। এ সময়ের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, তাদের অপতৎপরতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে এবং তারা ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ আশা করছে, তারা সফল হবে না।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটলে, তারা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিবেন। এর জন্য সব জেলার এসপিকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।