ঢাকা অফিস:
উপরের শিরোনাম পড়ে অনেকেই হয়তো চিন্তার জগতে হাবু-ডবু খাচ্ছেন যে বিষয়টা কি? ২০০৭ সাল; আমি তখন খুলনা বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের একজন ছাত্র এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বিএল কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। তখন আমরা কলেজ কোন উপলক্ষে ছুটি হলে দায়িত্বশীলরা পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা গুলোতে গ্রুপ ভিত্তিক বেড়াতে যেতাম ।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে আমের সময় কলেজ কিছু দিনের জন্য ছুটি হলো । তখন আমরা চিন্তা করলাম এবার আমরা সাতক্ষীরায় বেড়াতে যাব । আমাদের বেড়ানো শুরু হলো ছাত্রশিবির বিএল কলেজের তৎকালীন সাংগাঠনিক সম্পাদক আশাশুনির প্রতাপনগরের বেলাল ভাইয়ের বাড়ীতে যাওয়ার মাধ্যমে। মহানগরীর তৎকালিন সভাপতি তারিকুল ইসলাম পিকু ভাই, অফিস সম্পাদক মুকাররম বিল্লাহ আনসারী ভাই, পরবর্তীতে দক্ষিন জেলা সভাপতি আব্দুল গফুর ভাই, আশাশুনির আলী হাসান ভাইসহ আরো অনেকে খুলনা থেকে মটর সাইকেল যোগে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বিকালে বেলাল ভাইয়ের বাড়িতে হাজির হলাম । ঐ এলাকার অনেক ছাত্র বিএল কলেজে লেখা-পড়া করে । ছুটিতে তারাও বাড়ীতে বেড়াতে গেছে এবং আমাদের যাওয়ার সংবাদ পেয়ে তারা দলে দলে পরিবারের সদস্যসহ আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে । অনেক ক্লান্ত থাকার কারনে প্রতাপনগরের কৃতি সন্তান এদেশের ইসলামী আন্দোলনের পরিচিত মুখ সকলের শ্রদ্ধেয় ও সম্মানীত ব্যক্তি যিনি এলাকায় “এমপি হুজুর” বলে পরিচিত জনাব মাওলানা রিয়াসাত আলী সাহেবের সাথে ফোনে কথা বললাম এবং আগামীকাল সকালে দেখা করবো বলে সিদ্ধান্ত হলো ।
পরদিন সকালে ফজরের নামাজ শেষে হালকা নাস্তা করে এমপি হুজুরের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নিজের মধ্যে খুবই উত্তেজনা অনুভাব করছি কারন যে মানুষটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি তার সুনাম বিএল কলেজ ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে সাতক্ষীরার প্রতিটি ছাত্রের কাছ থেকে অসংখ্য বার শুনেছি । বাড়ীর সামনে পৌছিয়ে অবাক দৃষ্টিতে আমি বাড়ীর দিকে তাকিয়ে ভাবছি এটা কি বার বার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার , বার বার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান , জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান ও বার বার নির্বাচিত এমপি মাওলানা রিয়াসাত আলী সাহেবের বাড়ী? আমি যখন দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি ঠিক তখন বেলাল ভাই বাড়ীর একপাশে ক্ষেতে কচু লাগানোর কাজে ব্যস্ত ব্যাক্তিকে সালাম দিয়ে বলল, হুজুর আমরা এসেছি । তখন আমি বুঝে নিলাম যে ইনি সেই এমপি হুজুর । হুজুর তড়ি-ঘড়ি করে ক্ষেত থেকে উঠে আমাদের সাথে সালাম বিনিময়ের পর মুসাফা করলেন এবং বৈঠক খানায় নিয়ে বসালেন । বৈঠক খানার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘরটি মনে হয় ১৪/১৫ হাত লম্বা এবং ৮ হাত মতো চওড়া হবে ।
উপরে গোলপাতার ছাওনী ও বাশের চাটায়ের বেড়া এবং তার মধ্যে আসবাবপত্র বলতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অনেক পুরাতন একটা কাঠের টেবিল ও একটা চেয়ার ,উভয়টায় বয়সের কারনে দূর্বল হয়ে গেছে। আর বাশের চটা দিয়ে বানানো বেঞ্চ যেখানে সাক্ষাত প্রার্থীরা এসে বসেন । আমরাও সেখানে বসলাম এবং কথা বলতে বলতে এক সময় দেখলাম একটা টিনের ডিসে (গামলা) পাকা আম কেটে নিয়ে এসেছে এবং আমরা সকলে হাত দিয়ে আম গুলো খেয়ে নিলাম । এরপর এমপি হুজুর উনার নাতিকে বলল আরো কিছু নাস্তা নিয়ে আসো, তখন সে বলল কি আনবো? হুজুর বললেন, আমি যে বিস্কুট খাই সেই বিস্কুট নিয়ে আসো। আমি তখন ভাবছি এমপি সাহেবের বিস্কুট মনে হয় আলাদা ভাল মানের কোন বিস্কুট হবে, একথা চিন্তা করতে করতে কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখি উনার নাতি ছোট ছোট দুই প্যাকেট বিস্কুট হাতে নিয়ে হাজির । আমি খেয়াল করলাম বিস্কুট গুলো কলমের মত চিকন সল্টেষ্ট জাতীয় বিস্কুট যার এক প্যাকেটের দাম তখন মনে হয় ২ বা ৩ টাকা ছিলো । আপ্যায়ন শেষে মুসাফা করে আমরা বিদায় নিলাম ।
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে দেশে -বিদেশে অনেক বড় বড় অট্টালিকা ও হোটেল-রেস্তোরায় বসে ধনী ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তি বা পরিবারের আথিতীয়তা গ্রহনের সুযোগ হয়েছে কিন্তু সেই দিন এমপি সাহেবের কুড়ে ঘর নামক বৈঠক খানায় বসে ২ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেট খেয়ে যে তৃপ্তি লাভ করেছিলাম তা আর কোন দিন হয়নি। বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় নিজের কাছে মনে হচ্ছিলো খলিফাতুল মুসলিমিন উমর ফারুক রাঃ মত শাসকের জীবন-যাপন পরিচালনার কথা শুধু ইতিহাসে পড়েছি কিন্তু আজ যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখে নিজে বড় ধন্য হলাম ।
ওগো মাবুদ আপনি আমাদের নির্লোভ, নিরহংকার, সৎ ও সহজ-সরল জীবনের অধিকারী, দ্বীন প্রতিষ্ঠার অগ্রসেনানী এমপি হুজুরের গুনাহ খাতা মাফ করে দিয়ে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন এবং আমাদেরকে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অল্পে তুষ্ট হয়ে জীবন-যাপন করার তৌফিক দিন। আমীন ।।
লেখক- মু. আতাউর রহমান বাচ্চু
নড়াইল জেলা আমির
ও নড়াইল-২ আসন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী