ঢাকা অফিস
এক সময় ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। শেখ হাসিনার টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকালজুড়ে যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত—সেই গণভবন এখন রূপ নিচ্ছে “জুলাই স্মৃতি জাদুঘর”-এ।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসেবেই নয়, দীর্ঘ সময়ে গণভবনকে শেখ হাসিনা ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো। কৃষি, মাছচাষ থেকে শুরু করে দলীয় কার্যালয়ের মতো ব্যবহার পর্যন্ত, সবই চলত তার ইচ্ছেমতো। সেখানেই অনুষ্ঠিত হতো আওয়ামী লীগের বহু দলীয় কর্মসূচি।
বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে সমালোচিত নানা সিদ্ধান্ত, নিপীড়ন, গুম-খুনের অভিযোগ উঠেছে এই স্থান ঘিরেই। এক সময় এই ভবন ছিল ক্ষমতা ও ভয় দেখানোর প্রতীক।
ঠিক এক বছর আগে ১৪ জুলাই সেখানেই সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনার দেওয়া ‘রাজাকারের বাচ্চা’ মন্তব্যই গতি এনে দেয় আন্দোলনে। সেই কোটাবিরোধী আন্দোলন জ্বলে ওঠে আগুনের মতো। পরে গণভবনে বসেই তিনি দেন দমনমূলক নানা সিদ্ধান্ত।
তবু শেষ রক্ষা হয়নি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে চরম অপমানজনক পরিস্থিতিতে গণভবন ছেড়ে পালাতে হয়।
ইতিহাসে ঠাঁই পাচ্ছে বিতর্কিত অধ্যায়
সরকার জানিয়েছে, এখন সেই গণভবনকে রূপান্তর করা হচ্ছে একটি জাদুঘরে। ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’-এর কাজ চলছে জোরেশোরে। উদ্বোধন হবে আগামী ৫ আগস্ট।
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বলেন, “গণভবন ছিল ক্রাইম জোন। এখান থেকেই পরিকল্পনা করা হতো রাষ্ট্রীয় গুম, হত্যা ও দমননীতি।”
তার ভাষায়, “জাদুঘরটি হবে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার স্থান।”
এক টাকায় ইজারা: শুরু যেভাবে
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে শেখ হাসিনার নামে গণভবনটি ইজারা দেওয়া হয়।
পরে ২০০৯ সালে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন’ এনে সেই সুবিধা সংহত করা হয়।
দেয়ালে লেখা ইতিহাস
বর্তমানে গণভবনের দেয়ালজুড়ে আঁকা নানা স্লোগান, গ্রাফিতি ও প্রতিবাদী বক্তব্য সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। যেমন—‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘হাসু আপা পলাইছে’, কিংবা শহীদ আবু সাঈদসহ নিহতদের নাম।
গণভবন ঘুরে আসা সাংবাদিক বোরহানুল আশেকীন বলেন, “একটা সময় ছিল যেটা ক্ষমতার প্রতীক, এখন তা শুধুই স্মৃতি। দেয়ালজুড়ে ৫ আগস্টের আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি।”
আরেক সাংবাদিক সাজেদা সুইটি বলেন, “শেখ হাসিনা সেখানে থাকতেন বটে, কিন্তু বাড়িটি ছিল দেশের ১৮ কোটি মানুষের। এখন যে বিধ্বস্ত রূপ—তা কেবল দুঃখজনক নয়, শিক্ষা পাওয়ার মতোও।”
তিনি যোগ করেন, “শাসকেরা যেন নিজেদের প্রভু না ভাবে—এটাই সবচেয়ে বড় বার্তা। তবে শুধু শাসকরাই নয়, জনগণকেও সময়মতো প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে।”