খুলনা এডিশন::
আওয়ামী লীগের টিকিটে হওয়া বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদের এক সময়ের চেয়ারম্যান, একাধিক ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলার পলাতক আসামি আলোচিত সেই মজিবর রহমান শামীমকে এবার মঞ্চে চরমোনাই পীরের পাশে বসতে দেখা গেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে বক্তৃতাও করেছেন তিনি। তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট ১ আসনের হাতপাখার প্রার্থী হিসেবে।
প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সব বন্ধ মিল, কল-কারখানা চালু ও ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে নগরীর শিববাড়ী মোড়ের এ সমাবেশে প্রধান অতিথি চরমোনাই পীরের আগমনের আগেই বক্তব্য দেন মজিবর রহমান শামীম।
এরপর ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম মঞ্চে এলে তার পাশেই বসেন তিনি।
একই জমি একই ফ্ল্যাটের দলিল জামানত রেখে একাধিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে জয় গ্রুপের মালিক হয়ে ওঠা মজিবর রহমান শামীমের এমন ভোল পাল্টানোর ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন অনেকে।
বিষয়টি নিয়ে অনেককেই কানাঘুষা করতে দেখা গেছে। তবে দাড়ি রেখে, বেশ পাল্টে চলার কারণে অনেকেই প্রথমে তাকে চিনতে না পারলেও নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ কেউ বিব্রতবোধ করেন।
আওয়ামী লীগের আমলে মজিবর রহমান শামীম ছিলেন চিতলমারীর একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পরে সেখানে তার স্ত্রীকে প্রার্থী দিয়ে নিজে হন উপজেলা চেয়ারম্যান। জয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হয়েছিলেন ঋণখেলাপিও। অস্ত্রসহ ধরাও পড়েছিলেন বিমানবন্দরে।
এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত খুলনার কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের ক্যাশিয়ার হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মজিবর রহমান শামীমের। এরশাদ শিকদারের গ্রেপ্তারের পর কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রাতারাতি টাকার মালিক বনে যান তিনি। এ নিয়ে এরশাদ শিকদারের ছেলের সঙ্গেও তার একাধিকবার বসচা হয় বলে এলাকায় সরেজমিন জানা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। এরপর প্রথমে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, জামায়াত না নেওয়ায় কয়েক দফায় চরমোনাই গিয়ে শেষ পর্যন্ত পীরের মুরিদ হয়ে ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেন মজিবর। তবে যোগ দেওয়ার পর প্রকাশ্যে জনসভা, ওয়াজ মাহফিলে যোগদানের বিষয়টি বাগেরহাটকেন্দ্রিক থাকলেও এই প্রথম খুলনার কোনো বড় সমাবেশে যোগ দিয়ে নিজেকে ইসলামী আন্দোলনের লোক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি।