ঢাকা অফিস::
১৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য ‘জাতীয় সমাবেশ’ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
১৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি জনাব ইয়াসিন আরাফাত, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি জনাব দেলাওয়ার হোসেন, উত্তরের প্রচার সেক্রেটারি জনাব আতাউর রহমান সরকার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, দক্ষিণের সহকারী প্রচার সেক্রেটারি জনাব আবদুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে আমরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছি। ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাক-স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার আমরা যতটুকু ভোগ করতে পারছি এবং জাতীয় সমাবেশ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি, সেজন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি, আল-হামদুলিল্লাহ। সমাবেশ আয়োজনে দেশবাসী, মিডিয়া ও প্রশাসন যে সহযোগিতা করছেন, সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সারথি, কোটি মানুষের প্রিয় নেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশে আমরা ইসলামিক ও দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারাও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
তিনি বলেন, ৭-দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই ঐতিহাসিক জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দাবিগুলো হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সকল গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থার করা।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার, তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত ফ্যাসিবাদীদের হাতে যারা জীবন দিয়েছেন, নিহত হয়েছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই গণহত্যার বিচার অবিলম্বে সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে যেন এই বিচার জাতির সামনে দৃশ্যমান হয়, এটা আমাদের জাতীয় সমাবেশের অন্যতম দাবি। এরপর নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রয়োজনে জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রে কতগুলো অর্গান ও বিভাগের মৌলিক সংস্কার শেষ করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশবাসী এই দাবি জানিয়ে আসছে। যে রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে এবং তারা মানুষের সকল মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে কর্তৃত্ববাদী ও বর্বর শাসন চালিয়েছিল। এই কর্তৃত্ববাদী শাসন যেন আর তৈরি না হয়, সেজন্য ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা সফল করা দরকার। জামায়াতে ইসলামী ঐকমত্য কমিশনকে সহযোগিতা করে জাতিকে একটা ঐক্যে পৌঁছার ব্যাপারে অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে। তিনি বলেন, সংস্কার না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। আবারো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে, তা জনগণ কিছুতেই মেনে নিবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই এই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
জুলাই শহীদ ও আহতদের অবদানের কথা শিকার করে তিনি বলেন, শহীদদের, আহতদের পুনর্বাসন এখনো শেষ হয়নি। তাদের চোখের পানি, তাদের কান্না, তাদের আহাজারি এখনো চলছে। অনেকেই বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় আছেন। অনেকেই হাসপাতালে আছেন। কিছু আহত বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও আমরা জাতীয় সমাবেশ থেকে জানাব।
পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আমরা আগেই জানিয়েছি। আমাদের সমাবেশ থেকে এই দাবি আবারো জানানো হবে। আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কালো টাকা ও পেশি শক্তির দৌরাত্ম্য কমবে। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবে। সংসদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোকদের যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একটি কোয়ালিটি সম্পন্ন সংসদ গঠিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের ভোটপ্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারকে লিখিতভাবে বিষয়টি আগেই জানানো হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ নির্বাচন কমিশন এব্যাপারে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচনের যুক্তিও আমরা এই সমাবেশ থেকে জাতির সামনে পেশ করব। আমরা দেখতে পাচ্ছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ভিন্নমত সহ্য করা হচ্ছে না। এইসব সমস্যা সমাধানে আমাদের সমাবেশ থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ তাদের মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন। তিনি বলেন, এইসব গণদাবি, গণআকাক্সক্ষাগুলো সামনে রেখেই আগামী ১৯ জুলাই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সমাবেশ সফল করে তোলার লক্ষ্যে একটা মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং এর অধীনে আরও ৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান মাইকের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশে পাড়া ও মহল্লায় মহল্লায় মিটিং ও মিছিল চলছে। ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গানের সুর ও নাটিকার মাধ্যমে সমাবেশের বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০টি পয়েন্টে প্রায় ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করবে। স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়ের জন্য আলাদা ড্রেস থাকবে। ঢাকা শহরের বাইরে থেকে ঢাকা এবং পার্শবর্তী জেলা থেকে যারা আসবেন তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আমরা কমপক্ষে ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। আমরা সারাদেশ এবং পাশর্^বর্তী জেলা থেকে যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে রেলপথ, নৌপথ এবং সড়কপথ সবপথেই এই সমাবেশের দিকে মানুষের ঢাল নামবে রাজধানী অভিমুখে ইনশাআল্লাহ। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি এই পার্কিং স্থানগুলো কিভাবে সেইফ রাখা যায়। সেখানেও আমাদের স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চতুর্দিকে ভিতরে এবং বাইরে মিলিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আমাদের ১৫টি মেডিকেল বুথ থাকবে। একাধিক বেড সম্বলিত প্রতিটি বুথে ২ জন করে এমবিবিএস ডাক্তার থাকবেন। জরুরি ঔষধ এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসও রাখার ব্যবস্থা করেছি। আমাদের জাতীয় সমাবেশের কার্যক্রমে আইটি টিম এবং লাইভ প্রচারের জন্য ড্রোন টু ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে সমাবেশে উচ্চমানের ভিডিও ধারণ এবং সমাবেশস্থলে এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শন করা এবং ফেসবুক, ইউটিউবসহ সকল সামাজিক মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার করা হবে। জনসভার শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজধানীর বাইরে থেকে আগত সাধারণের জন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথে নিরাপদে যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় চাহিদা জানিয়েছেন এবং তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা সর্বশেষ যে খবর পাচ্ছি তাতে সারাদেশ থেকে সড়ক, নৌ এবং রেলপথসহ বিভিন্ন পথ দিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করবেন। এ কারণে নগরজীবনে একটু দুর্ভোগ এবং যানজট সৃষ্টি হতে পারে। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দেশবাসী এবং নগরবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাদেরকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা দেশের কল্যাণের জন্যই কাজ করছি।
তিনি বলেন, জনদুর্ভোগ এড়ানোর লক্ষ্যে সমাবেশের জন্য আমরা নগরের সড়ক ব্যবহার করি নাই। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশবাসী, সরকার ও সরকারের যত বিভাগ আছে সকলের কাছে দোয়া এবং সহযোগিতা কামনা করছি। সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতিও আমাদের একই আহ্বান থাকল।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় সমাবেশে যারা উপস্থিত হবেন বৃষ্টি হলেও শৃঙ্খলার সাথে সমাবেশ সফল করে তারা যেন সমাপ্তি পর্যন্ত থাকেন সেই আহ্বান আগেও জানিয়েছি আজকেও এই সম্মেলনের মাধ্যমে জানালাম। আমাদের জাতীয় সমাবেশের উদ্দেশ্য এবং সমাবেশের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু কথা এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করে জামায়াতে ইসলামীর ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশ সর্বতোভাবে সফল করার জন্য সকল মিডিয়ার সাংবাদিক, প্রশাসন এবং দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।